.ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন
শীত আসছে। বাড়ছে কুয়াশা। আর উড়ছে ধুলা। ধুলা, বালু, গাড়ির ধোঁয়া আর আবর্জনা মিলে এই সময় পরিবেশ একেবারে ভারাক্রান্ত। আর এই সময়টা সবচেয়ে খারাপ যাঁদের অ্যালার্জি বা হাঁপানি আছে, তাঁদের জন্য। প্রতিবছর এই সময়েই হাঁপানি বা অ্যাজমার রোগীরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হন বা জরুরি বিভাগে আসেন। আর ঘরে ঘরে কাশি, হাঁচি তো শুরু হয়েই গেছে। তাই আগেই সাবধান হওয়া ভালো।
ধুলা কি এড়ানো যায়?
ধুলা হলো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, যা নাকের ছিদ্র দিয়ে ঢুকে শ্বাসনালি হয়ে ঢুকে পড়তে চায় আরও ভেতরে অর্থাৎ ব্রনকিওল বা ফুসফুসের ভেতরকার শাখা-প্রশাখায়। আমাদের শ্বাসতন্ত্র তখন এর হাত থেকে বাঁচতে সক্রিয় হয়ে ওঠে, এর চুলের মতো সিলিয়াগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে ধূলিকণাকে বের করে দিতে, আর দেহের নানা প্রতিরোধী কোষ ছুটে আসে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োগ করতে। ফলে সজোরে হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, খুক খুক করে কাশি হয়।
হাঁপানি রোগীদের এসব রাসায়নিক নিঃসরণের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় শ্বাসকষ্ট। তার মানে যত নষ্টের গোড়া হলো ওই ট্রিগারগুলো, মানে ধুলাবালু। তাই একে এড়িয়ে চলতে হবে। কিন্তু তা কি সম্ভব? কিছুটা তো সম্ভবই। বাড়ির সামনের জায়গায়, উঠানে, ছাদে পানি ঢেলে ধুলা কমানো যায়। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা এ সময় ঘর ঝাড়া, ঝাড়ু দেওয়া, বিছানা ঝাড়ার সময় দূরে থাকুন। কার্পেট পরিহার করাই ভালো। পোষা প্রাণীকে এড়িয়ে চলুন। জামাকাপড় সব সময় ড্রয়ারের ভেতর বা ক্লোজেটে আটকে রাখুন। সপ্তাহে এক দিন তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কভার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিন।
তৈরি থাকুন
যাঁদের হাঁপানি আছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শে পুরো শীতের মৌসুমে প্রতিদিন একটি-কি দুটি ইনহেলার ব্যবহার করে যেতে পারেন। বাইরে হাঁটতে যাওয়ার সময় দরকার হলে দুই চাপ ইনহেলার নিয়ে নিন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র কাছেই রাখুন, রসদ নিয়ে তৈরি থাকুন—শ্বাসকষ্ট বাড়লেই যেন ব্যবহার করা যায়। সর্দি-কাশি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, যাতে বেড়ে না যায়। শীতের শুরুতেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে পারেন।
খুব গরম জামাকাপড় পরলে ঘেমে ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই একটা ফুলহাতা সুতি জামার ওপর আরেকটা হালকা জামা পরে বের হতে পারেন। কুয়াশার হাত থেকে বাঁচতে মাথা ঢেকে নিন টুপি বা স্কার্ফে। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল বা বেশি ধোয়াধোয়ি এখন একটু এড়িয়ে যান। ঝাড়মোছ বা উঠানে কাজ করার সময় নাকে পাতলা কাপড় বা মাস্ক পরে নিতে পারেন। ধুলার ভয়ে দরজা-জানালা বন্ধ না করে বরং প্রচুর আলো-বাতাস আসতে দিন। ধূমপান তো করবেনই না, ধূমপায়ীর কাছে বসবেনও না।
মেডিসিন বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ|
Discussion about this post