ডা. আবু সাঈদ
শিশুদের শ্বাসতন্ত্র খুব নাজুক আর অতি সংবেদনশীল। তাই হিমেল হাওয়ায় বা আবহাওয়ার পরিবর্তনে তাদের চট করেই কাশি হয়ে যায়। সাধারণ এই কাশিতে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই পাড়ার দোকান থেকে কিনে নেন কাশির ওষুধ। আর দিনে দু-একবার দু-তিন চামচ করে খাওয়াতে থাকেন।
কিন্তু এতে কি শিশুর ক্ষতি হতে পারে? হ্যাঁ, হতেই পারে। কারণ, সব কাশিই এক নয়, কাশির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধরন আর ভিন্ন ভিন্ন কারণ, আর তার জন্য অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ। আর যেকোনো ওষুধের মাত্রা বয়সভেদে নয়, ওজন অনুযায়ী দেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়ালে সঠিক মাত্রা অনেক সময় নাও হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ বাজার-চলতি কফ সিরাপগুলো শিশুদের শরীরে খিঁচুনি, ঝিমুনি, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন, কিডনি ও লিভারের ক্ষতিসহ নানা সমস্যা তৈরি করে।
শিশুদের জন্য বহুল ব্যবহৃত সালবিউটামল সিরাপ একটু বেশি মাত্রায় দিলেই অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন ও শরীরে কাঁপুনি হতে পারে। অধুনা ব্যবহৃত লেভো সালবিউটামলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরও বেশি; কারণ ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের বাচ্চাদের জন্য এই সিরাপ এক চামচ করে খাওয়ার কথা, কিন্তু এর কম বয়সে কী পরিমাণে দিতে হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে প্রায়ই শিশুরা বেশি মাত্রায় বা ভুল ডোজে ওষুধের শিকার হয়। আবার অনেক কাশির সিরাপে হাইড্রোকার্বন থাকে।
মূলত বুকব্যথা ও কাশি দমনে এটা ব্যবহৃত হয়। কিন্তু হাইড্রোকার্বন একধরনের নারকোটিক, যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। বড়দের কফ সিরাপের অনেক উপাদান যেমন: গুয়াইফেনেসিন, সিউডোএফিড্রিন, ট্রাইপোলিডিন, ডেক্সট্রো মেথরপেন ইত্যাদিও কমবেশি থাকে শিশুদের অনেক সিরাপে। এসব উপাদান শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। অনেকে আবার বাড়িতে থাকা বড়দের কফ সিরাপ একটু কম পরিমাণে বা কম মাত্রায় শিশুদের খাইয়ে দেন। এটিও গুরুতর ভুল।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কফ সিরাপ খেয়ে ৫৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অপর দিকে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) হিসাবমতে, ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কফ সিরাপ খেয়ে এক হাজার ৫০০ জন শিশুর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে ওষুধের দোকানে চিকিৎসকের সুস্পষ্ট ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই কফ সিরাপ দেদার বিক্রি হয়। তাই আমাদেরও হওয়া উচিত সতর্ক।
শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল|
Discussion about this post