অ্যান্টিবায়োটিক যখন রোগ সারাতে কাজ করে না, চিকিৎসকেরা তখন সমস্যায় পড়ে যান। এ রকম অবস্থায় মারাত্মক জীবাণু সংক্রমণের কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ভুল প্রয়োগ বা মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। তখন রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয় দিনের পর দিন। চিকিৎসকেরা তখন নতুন এবং বেশি দামি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে বাধ্য হন।
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধ করতে প্রচারাভিযান চালানো হলেও সমস্যাটি রয়েই গেছে। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রংকাইটিস, সাইনোসাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে দেওয়া হচ্ছে। এসব রোগ ভাইরাসের কারণেও হতে পারে, অ্যান্টিবায়োটিক যা সারাতে পারে না। কারণ, অ্যান্টিবায়োটিক লড়াই করে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে।
কেন অ্যান্টিবায়োটিকের এ রকম অপব্যবহার হচ্ছে? রোগীর দাবির কারণে কখনো কখনো ভুল ব্যবস্থাপত্রও দেওয়া হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, চিকিৎসকেরা মাঝে মাঝে রোগীর প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে রোগী চাইলেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
কিন্তু রোগীরা অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে কতটুকু জানে? যুক্তরাষ্ট্রে ১১৩ জন রোগীর ওপর চালানো এক গবেষণায়
দেখা যায়, ৪৮ শতাংশ রোগী অ্যান্টিবায়োটিককে ভাইরাসজনিত অসুস্থতার ওষুধ মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) একটি কর্মসূচির মাধ্যমে রোগীদের ভাইরাসজনিত অসুস্থতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছে। ভাইরাসজনিত রোগ সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই বলে তাদের বোঝানো হচ্ছে।
রোগীদের অধিকাংশেরই ধারণা, জীবাণু তো জীবাণুই। এদের আবার পার্থক্য কী? ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে তাঁরা অনেক সময় এক করে ফেলেন। আর মনে করেন, অ্যান্টিবায়োটিক যেহেতু জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে, তাই এটি সেবন করলেই সব জীবাণুঘটিত রোগই ভালো হবে। কিন্তু এ রকম ধারণা ঠিক নয়। আবার তাঁদের মধ্যে এমন ভুল ধারণাও আছে যে, অ্যান্টিবায়োটিক কোনো ক্ষতি করে না এবং এটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক কখনো কখনো রোগীর অনেক ক্ষতি করতে পারে। সংক্রমণের চিকিৎসায় এ ধরনের ওষুধ খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু অন্য যেকোনো ওষুধের মতো এটিও শুধু সঠিক প্রয়োগেই কার্যকর হয়। আর যখন অতিরিক্ত পরিমাণে প্রয়োগ করা হয় বা অপ্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, তখন ক্ষতিকর হয়ে যায়। এটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি বমি ভাব বা মাথাব্যথা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যখন-তখন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন বন্ধ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা উচিত নয়।
সূত্র: লাইভসায়েন্স।
Discussion about this post