জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস।
নীরব ঘাতক ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের নারী-পুরুষ এই ঘাতক ব্যাধির শিকার হচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম- সর্বত্রই প্রায় সমান হারে ডায়াবেটিস ছড়িয়ে পড়ছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এ রোগে আক্রান্ত।\হবাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) এক জরিপেও এর প্রমাণ মিলেছে।
ওই জরিপে দেখা গেছে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২৫ শতাংশ বা এক-চতুর্থাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা ডায়াবেটিক রোগীর জন্য আরও ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করা পৃথক গবেষণায় দেখা যায়, করোনায় আক্রান্তের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ছিলেন। একইসঙ্গে করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। আবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া প্রতি তিনজনের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।
বাডাস সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম থাকে। এ কারণে যে কোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার সক্ষমতা শরীরের থাকে না। সুতরাং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। অনেকের ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, হৃদরোগ, হাইপারটেনশনসহ বিভিন্ন কোমরবিডিটি (বিভিন্ন রোগ) রয়েছে। এসব ব্যক্তির বয়স ষাটোর্ধ্ব হলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম থাকবে।\হবাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মৃত্যুহার বেশি। বাংলাদেশে করোনায় মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশির বয়স ষাটের ওপরে। এসব ব্যক্তির ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন কোমরবিডিটি ছিল। সুতরাং এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির করোনা হলে তার মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি।
এ অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডায়াবেটিস সেবায় পার্থক্য আনতে পারেন নার্সরাই’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রতিপাদ্যের তাৎপর্য তুলে ধরে বাডাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, নার্সরা উদ্যোগী হলে ডায়াবেটিস সেবায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারেন। নিজে নিজে রক্ত পরীক্ষা, ইনসুলিন দেওয়াসহ রোগীকে তারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলগুলো শিখিয়ে দিতে পারলে ডায়াবেটিস সেবায় বড় পরিবর্তন আসবে। এজন্য নার্সদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডির আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত ‘ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক সিনড্রোম :ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড রিভিউস’ শীর্ষক এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন ডায়াবেটিক রোগী।
এর মধ্যে পুরুষ এবং ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। করোনা-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি হয় ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীর মধ্যে। করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্তরা কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।করোনার সংক্রমণের পর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য বিশ্বের আরও অনেক দেশে পাওয়া গেছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের এক প্রবন্ধে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
Discussion about this post