হার্টবিট ডেস্ক
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) ‘বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস’ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) এবং ডেটা ফর ইমপ্যাক্ট (ডিএফআই)।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন , দেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি এক ঘণ্টায় তিনটি শিশু মারা যায়। এই হিসাবে প্রতিদিন ৬৭, আর প্রতি বছর ২৪ হাজার ৩০০ শিশু মারা যায় এই রোগে। দেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। কিন্তু এই রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ততটা পাচ্ছে না।
বুধবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে আইসিডিডিআর,বি’র এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভার শুরুতে আইসিডিডিআর,বি’র মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণা প্রধান কামরুন নাহার জানান, গত দুই দশকে স্বাস্থ্য খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। শিশুর মৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও এখনও নিউমোনিয়ার কারণে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ২৪ হাজার ৩০০ শিশু মারা যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে আইসিডিডিআর,বি’র মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ‘২০১১ সালে দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে ১১ দশমিক ৭টি শিশু মারা যেতো নিউমোনিয়াতে। আর বর্তমানে সেই সংখ্যা ৮ দশমিক ১। কিন্তু বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা তিনটিতে নামিয়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যেসব শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়, তার ৫২ শতাংশই মারা যাচ্ছে বাড়িতে। তারা কোনও ধরনের চিকিৎসাও পায় না। অপরদিকে, তিন শতাংশ শিশু চিকিৎসা পেয়েও বাড়িতে মারা যাচ্ছে। আবার হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার পরেও নিউমোনিয়ায় মারা যাচ্ছে ৪৫ শতাংশ শিশু।’ তাই নিউমোনিয়ার লক্ষণ চিহ্নিত শিশুদের বাড়িতে আর রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ‘নিউমোনিয়াতে শিশুরা হাইপোক্সেমিয়ায় (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) বেশি মারা যায়। কোভিডের সময় এটা আরও বেশি। যেসব শিশুর অক্সিজেনের স্বল্পতা থাকে, তাদের নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার বেশি। তাই প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটার থাকা জরুরি।’
ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ও শিশু নিউমোনিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রুহুল আমিন জানান, দেশে পাঁচ বছরের শিশুদের মৃত্যুর মধ্যে নিউমোনিয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ। আর এ মৃত্যু প্রতিরোধের বড় উপায় জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো। ছয় মাস পর থেকে মায়ের বুকের দুধের সঙ্গে ঘরে তৈরি খাবার খাওয়াতে হবে।
নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ পরিবেশ দূষণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ন্ত্রণে আনা খুব জরুরি। একইসঙ্গে নিউমোনিয়ার উপসর্গ থাকলে শিশুকে বাড়িতে না রেখে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিকভাবে শিশুকে নিউমোনিয়ার ওষুধ খাওয়ানো গেলে মৃত্যু রোধ করা যাবে।’
অনুষ্ঠানে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সমীর সাহা বলেন, ‘নিউমোনিয়া কোন জীবাণুর কারণে হচ্ছে সেটির ৫০ শতাংশই এখনও অজানা। সেটি কি ভাইরাসের মাধ্যমে হচ্ছে, নাকি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে, তা জানা নেই। এটি জানার উপায় আছে, কিন্তু ইচ্ছে নেই। নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হলে এই কারণ জানার উদ্যোগ নিতে হবে।’
আইসিডিডিআর,বি’র পুষ্টি ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতি বলেন, ‘নিউমোনিয়ায় মৃত্যু প্রতিরোধের আগে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হবে। যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভোগে নিউমোনিয়ায় তাদের মারা যাওয়ার ঝুঁকি যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভোগে না, তাদের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। আর আমাদের দেশে অভিভাবকরা ডায়রিয়া হলেও সচেতন হন, কিন্তু নিউমোনিয়া হলে সচেতন হন না।’
Discussion about this post