অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ
বুকের মাংসের নিচে হাড় দিয়ে নির্মিত একটি খাঁচা রয়েছে। এই খাঁচার হাড়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই দেখা দিতে পারে। বুকের এই খাঁচার রোগের জন্য মানুষ সামনের দিকে অথবা কোনো এক পাশে ঝুঁকে যেতে পারে যাকে কাইফোস্কোলিওসিস বলে। পিঠের হাড়গুলোকে যারা শক্তভাবে বেঁধে রেখেছে তাদের সমস্যা হলে এই রোগ দেখা দেয়।
কারণগুলো হলো : ১. জন্মগত দোষত্রুটি থাকলে।
২. মেরুদন্ডের হাড়গুলোতে যদি যক্ষ্মা, হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা অস্টিওপোরসিস এবং এনকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস দেখা দেয়।
৩. কোনো ধরনের আঘাত লাগলে।
৪. মাংসপেশি বা স্নায়ুতন্ত্রের রোগ যেমন পোলিওমাইলাইটিস হলে,
সামনের দিকে সাধারণ একটু ঝুঁকে গেলে ফুসফুসে খুব একটা চাপ পড়ে না। তবে কাইফোস্কোলিওসিস বা সামনের এবং সঙ্গে সঙ্গে পাশের দিকে এক সঙ্গে ঝুঁকে পড়লে ফুসফুসের ওপর চাপের মাত্রা অনেকাংশ বেড়ে যায়। কাইফোস্কোলিওসিস যদি খুব ব্যাপক হয় তাহলে বুকের খাঁচার স্ফীতি কমে যায় এবং নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফুসফুসে বাতাস চলাচল বা ভেন্টিলেশন এবং ফুসফুসে রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়। এ ধরনের রোগীদের শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে যাকে রেসপিরেটরি ফেইলিওর টাইপ-২ বলে। পরবর্তী সময়ে ফুসফুসের ধমনির রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদযন্ত্রের ডান দিকের বিপর্যয় ঘটে। ফলে রোগীর আয়ু কমে যায়।
রোগের এই ধরনের বিকাশ ব্যাপকতর হয় যদি ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে জীবাণু সংক্রমণ ঘটে। শিশুদের অনেক বছর হাঁপানি চলতে থাকলে তাদের বুক অনেকটা কবুতরের বুকের মতো হয়ে যায়, যাকে পিজিয়ন চেস্ট বা পেকটাস কেরিনেটাম বলে। বয়স্ক রোগীদের ফুসফুসের ক্যান্সারের একপর্যায়ে বুকের হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে যায়।
এক্স-রে করলে দেখা যায় যে, ক্যান্সারের স্থানটিতে বুকের হাড় উধাও হয়ে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনা বা যেকোনো আঘাতে বুকের হাড় ভেঙে যেতে পারে। দেহের অন্যান্য হাড় ভেঙে গেলে প্লাস্টার করে রাখা যায়। কিন্তু বুকের হাড় ভেঙে গেলে চিকিৎসকের পক্ষে চিকিৎসা করা খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু সেই ভাঙা হাড়গুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের তালে তালে ফুসফুসে খোঁচা দিতে থাকে। ফলে রক্তক্ষরণ হয়ে ফুসফুসের পর্দার অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধে এবং এটি খুব বিপর্যয়কর অবস্থা।
অনেক সময় মানুষের বুকটা ফানেলের মতো হয়ে যায় যাকে ফানেল চেস্ট বা পেকটাস এক্সকাভেটাম বলে। এতে বক্ষপিঞ্জরের স্টারনাম বলে যে হাড়টি আছে তার নিচের অংশ পেছনের দিকে চলে যায়। তখন হৃৎপি- বাম দিকে আরও সরে আসে। ফলে স্টারনাম এবং মেরুদন্ডের মাঝখানে পড়ে চেপে যায়। যদিও তাতে হৃদযন্ত্রের কর্মকান্ডে খুব একটা ব্যাঘাত ঘটে না। পেকটাস এক্সকাভেটাম হলে বুকের খাঁচার স্ফীতি কমে যায় এবং ভাইটাল ক্যাপসিটিও কমে আসে। ফুসফুসের কর্মকান্ডের অসুবিধার জন্য এই রোগ হলে অস্ত্রোপচারের খুব একটা দরকার হয় না। তবে বুকের সৌন্দর্য রক্ষার প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করতে হয়।
অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ,বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা।
Discussion about this post