ডা. মো. আসাফুজ্জোহা
চিকিৎসাব্যবস্থায় উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দাঁত তোলার কারণগুলোও কমে আসছে। কারণ, বিভিন্ন রোগে দ্রুত সময়মতো চিকিৎসা নিলে দাঁত ফেলে দেওয়ার আর দরকার পড়ে না। তারপরও প্রায়ই রোগীর দাঁত ফেলতে হচ্ছে সংরক্ষণের কোনো উপায় না থাকার কারণে।
যেসব কারণে দাঁত ফেলতে হয়
১. আক্কেল দাঁত: অপেক্ষাকৃত দেরিতে ওঠে বলে মাড়ির সর্বশেষ দাঁতগুলোকে ওয়াইজডম টুথ বা আক্কেল দাঁত বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাড়ি শক্ত ও দাঁতটি বাঁকা হয়ে ওঠার কারণে এই দাঁতের জায়গায় প্রদাহ হয়। মাড়িতে বড় গর্ত হয়ে যায়, অনেক সময় পাশের দাঁতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবস্থানগত কারণে বেশির ভাগ সময় এই দাঁতগুলো ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
২. দাঁতের ধারককলা ক্ষতিগ্রস্ত: প্রতিটি দাঁত চোয়ালের হাড় ও মাড়ির মাধ্যমে শক্তভাবে নিজ স্থানে আটকে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি মাড়ির রোগ বা দাঁতের সংক্রমণ, দুর্ঘটনা, ডেন্টাল ফ্লসের পরিবর্তে টুথপিক বা ধাতব কাঠির অতিরিক্ত ব্যবহার, ক্যালসিয়ামের অভাব ও হাড় ক্ষয়, অটোইমিউন রোগ বা অন্য কোনো কারণে দাঁতের ভিত দুর্বল হয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় নড়ে গেলে দাঁত ফেলে দিতে হয়।
৩. রুট ক্যানেল চিকিৎসা শেষ না করা: দাঁতের ভেতরের মজ্জা সংক্রমিত হলে রুট ক্যানেল চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। এটি সময়সাপেক্ষ, জটিল ও অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল। তবে এ চিকিৎসার পর ব্যথা কমে গেলে কেউ কেউ চিকিৎসাটি সম্পূর্ণ করেন না। এতে পরে দাঁতটি এমনভাবে ভাঙতে পারে যে আর তা সংরক্ষণ করার উপায় থাকে না।
৪. অর্থোডন্টিক চিকিৎসা: আঁকাবাঁকা বা এলোমেলো দাঁতের চিকিৎসায় অর্থোডন্টিক চিকিৎসা এখন জনপ্রিয় ও নিরাপদ। এই চিকিৎসায় দাঁত ফেলার প্রয়োজন পড়তে পারে।
৫. অবহেলা: দীর্ঘদিন দাঁতের ব্যথা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা না নেওয়া অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে দাঁত ক্রমান্বয়ে ভেঙে যেতে পারে এবং বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দাঁত সংরক্ষণ কষ্টসাধ্য।
৬. অন্যান্য: দাঁতের কাছাকাছি টিউমার, ক্যানসার বা চোয়ালের হাড় ভেঙে গেলে অথবা দুর্ঘটনায় বা ক্যারিজ থেকে দাঁতের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাঁত ফেলতে হবে।
দাঁত তোলার আগে যা করণীয়
চিকিৎসককে অন্য সব যেমন ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, রক্তরোগ, রক্তস্বল্পতা, লিভার বা কিডনির সমস্যা, অ্যালার্জি, কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিজ্ঞতা, গর্ভাবস্থা, আগে কোনো অস্ত্রোপচার হয়েছিল কি না ইত্যাদি খুলে বলুন। অ্যাসপিরিন, স্টেরয়েড ইত্যাদি ওষুধ সেবন করলে জানান। বিষয়গুলো স্পষ্ট না হলে অ্যানেসথেসিয়া ও দাঁত তোলা থেকে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে অতিরিক্ত রক্তপাত, অচেতন হয়ে পড়া, রক্তচাপের ওঠানামা, অ্যালার্জি, ক্ষত না শুকানো ইত্যাদি অন্যতম। যদি রক্তচাপ বা রক্তের শর্করা অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে আগে এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কোনো ওষুধ বন্ধ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দাঁত তোলার পর করণীয়
চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধের নাম, মেয়াদ, মাত্রা বা ডোজ, সময়ের ব্যবধান ঠিকমতো জেনে সঠিকভাবে অনুসরণ করুন। সঠিকভাবে ওষুধ সেবন না করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে:
- দাঁত তোলার পর গজ বা তুলা এক ঘণ্টা বা নির্দেশমতো কামড় দিয়ে রাখতে হবে।
- প্রথম ছয় ঘণ্টা গরম ও শক্ত খাবার গ্রহণ না করাই ভালো। কুলি না করাই উচিত।
- ২৪ ঘণ্টা পর থেকে উষ্ণ পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করা যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- যেকোনো প্রয়োজন বা অস্বাভাবিকতায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. মো. আসাফুজ্জোহা, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা
Discussion about this post