ডঃ তারেক আনোয়ার
কিডনির পাথর এখন অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এটা একটা কিংবা উভয় কিডনিতেই হতে পারে। এটা সাধারণত ৩০-৬০ বছর বয়সীদের হয়। ১৫% পুরুষ এবং ১০% নারীর জীবনের কোন এক সময় কিডনিতে পাথর হতে পারে।
ডাক্তারী ভাষায় কিডনির পাথরকে nephrolithiasis বলা হয়। আর যদি পাথরের কারণে প্রচন্ড ব্যাথা হয়, তাহলে এটাকে renal colic বলা হয়।
কিডনির পাথর আসলে কি?
আপনার কিডনি রক্ত থেকে বর্জ ফিল্টার করে প্রস্রাব তৈরি করে। মাঝেমধ্যে প্রস্রাবে থাকা লবণ এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ একসাথে জোড়া লেগে কিডনির ভিতরে ছোটো ছোটো পাথর তৈরি করে। কিডনির পাথর বিভিন্ন সাইজ, আকার এবং রঙের হয়। কিছু কিছু পাথরের সাইজ হয় বালির কণার মতো। আবার কিছু কিছু বড় হয়ে একটা গলফ বলের সমান হয়ে যেতে পারে।
কিডনির পাথর এর প্রকারভেদ
কিডনির পাথর সাধারণত চার ধরণের হয়ঃ
- Calcium stones: এটি কিডনির পাথরের মধ্যে সবচেয়ে কমন। এগুলো সাধারনত calcium oxalate দ্বারা গঠিত হয়।
- Struvite stones: ম্যাগনেসিয়াম এবং এমোনিয়া দিয়ে তৈরি হয়; অধিকাংশ সময় শিঙা-আকৃতির হয় এবং বেশ বড় হয়।
- Uric acid stones: – সাধারণত মসৃণ, বাদামী এবং অন্য ধরণের পাথরের চেয়ে নরম হয়
- Cystine stones: – সাধারণত হলুদ এবং দেখতে পাথরের মতো না হয়ে স্ফটিকের মতো হয়
কিডনির পাথরের উপসর্গ
পাথর খুব ছোট হলে সাধারণত কোন উপসর্গ দেখা যায় না। এটা এমনকি কোনো ব্যাথা ছাড়াই প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যেতে পারে। উপসর্গ তখনই দেখা দেয়, যখন পাথরঃ
- কিডনিতে আটকা পড়ে যায়
- মূত্রনালীর ভিতর দিয়ে চলা শুরু করে (কিডনির সাথে মুত্রথলীকে সংযুক্ত করা নালীটা হচ্ছে মূত্রনালী)
- ইনফেকশন হয়ে যায়
এগুলোর কোন একটা হলে, নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারেঃ
- পিঠের নিচের অংশে অনবরত ব্যাথা হতে পারে
- পুরুষদের অণ্ডকোষেও ব্যাথা হতে পারে
- পিঠে এবং তলপেটের সাইডে প্রচন্ড ব্যাথা হতে পারে; ব্যাথা কখনো কয়েক মিনিট, কখনো কয়েক ঘন্টা থাকতে পারে
- ঘন ঘন মূত্রত্যাগ হতে পারে
- মূত্রত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যাথা হতে পারে
মূত্রত্যাগের সময় রক্ত পড়তে পারে; এটা কিডনির অথবা মূত্রনালীর সাথে পাথরের আঁচড় লাগার কারণে হতে পারে - বমি বমি ভাব হতে পারে
- অস্থির অস্থির ভাব লাগতে পারে এবং স্থির হয়ে শুয়ে থাকা অসম্ভব মনে হতে পারে
- অবরুদ্ধ মূত্রনালি এবং কিডনি ইনফেকশন
যদি পাথর মুত্রনালীকে অবরুদ্ধ করে রাখে, তাহলে বর্জ্য পদার্থ কিডনি থেকে বের হতে পারে না। এর ফলে কিডনিতে ব্যাকটেরিয়া জমা হয়ে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।
কিডনিতে ইনফেকশন হলে কিডনির পাথরের উপসর্গের পাশাপাশি এই উপসর্গগুলোও দেখা দিতে পারেঃ
- জ্বর হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে উপরে উঠতে পারে
- শীত শীত ভাব লাগতে পারে এবং শীতে গা কাঁপা শুরু হয়ে যেতে পারে
- শরীর দুর্বল এবং শক্তিহীন মনে হতে পারে
- ডায়ারিয়া হতে পারে
কিডনির পাথর হওয়ার কারন
প্রস্রাবে পানি, লবণ এবং খনিজ পদার্থের স্বাভাবিক ভারসম্যের পরিবর্তন হলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। ভিন্ন ধরণের পরিবর্তনের কারণে ভিন্ন ধরণের পাথর হতে পারে। বিভিন্ন কারণে – খাদ্যের পরিবর্তন থেকে দীর্ঘমেয়াদি রোগের উপস্থিতি – প্রস্রাবের পরিবর্তন হতে পারে।
কিছু কিছু মানুষের বার বার কিডনিতে পাথর হতে পারেঃ
- যাদের খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার কম কিন্তু প্রচুর প্রোটিন আছে
- যারা নিষ্ক্রিয় থাকে অথবা বিছানা থেকে উঠতে পারে না
- যাদের পরিবারে অনেক মানুষের কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস আছে
- যাদের কয়েকবার কিডনিতে অথবা মূত্রনালীতে ইনফেকশন হয়েছে
- যাদের শুধুমাত্র একটা কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে
কিছু কিছু ঔষধ আছে, যেগুলো কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়ঃ
- Aspirin
- Antacids
- Diuretics
- কিছু কিছু antibiotics
- HIV ভালো করার কিছু কিছু ঔষধ
- মৃগীরোগ ভালো করার কিছু কিছু ঔষধ
Discussion about this post