ক্যান্সার মানেই মহামারি ব্যধি, শুনলেই গা শিউরে ওঠে। অনেকেই অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন এই রোগে। যতরকম ভয়ংকর ক্যান্সার রয়েছে তার মধ্যে ত্বকের ক্যান্সার অন্যতম।
ত্বকের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই ত্বকের ক্যান্সার। শুরুতেই শনাক্ত করা গেলে ত্বকের ক্যান্সার সারানো সম্ভব। কিছু কিছু ক্যান্সার ত্বকের পরিবর্তন দিয়ে শুরু হয়। যেমন মেলানোমা, বেসাল সেল কার্সিনোমা, এবং স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা ইত্যাদি। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। আসুন ত্বকের ক্যান্সার সম্পর্কে খানিকটা ধারণা নেয়া যাক।
লক্ষণগুলো কি কি?
ত্বকের ক্ষত, ব্রণ, আঁচিল, জ্বালাপোড়া, চুলকানি, শুষ্ক খসখসে ও অস্বাভাবিক ত্বক, ফোলা ঠোঁট, ত্বক বাড়া ও ফুলে যাওয়া এবং মাথার অস্বাভাবিক ত্বক, এডিমা বা তৈলশূন্যতা, ত্বকে বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণ যেমন বাদামী, কালো, লাল, সাদা, নীল ইত্যাদি।
কী কী কারণে হয়
এই রোগের প্রধান কারণ বলা যায় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মী। শুধু ক্যানসার নয় এই অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের বলিরেখা, দাগ, ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া এবং অ্যালার্জির জন্যও দায়ী।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, লম্বা সময় ধরে কাঁচের জানালা দিয়ে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি গ্রহণ করার ফলে অন্যদের চেয়ে পাইলটদের ত্বকের ক্যানসার হওয়ার প্রায় দ্বিগুণ ঝুঁকি থাকে। ফর্সা এবং লাল চুলের অধিকারীদের ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশী।
দিনের বেলায় বের হতে হলে অথবা সূর্যের আলোয় বেশীক্ষণ কাজ করার প্রয়োজন হলে সানস্ক্রিন না লাগালে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বংশগতভাবেও এই রোগ হতে পারে। একবার হলে পুনরায় আবার এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রেডিয়েশনের কাছে বেশি সময় থাকলে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আর্সেনিকের কারণেও ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে।
কীভাবে রোগ নির্ণয় করবেন
ত্বকের ক্যান্সার হয়েছে কি না তা নিজে নিজে ত্বক পর্যবেক্ষণ করে নির্ণয় করা সম্ভব। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেহের খোলা ও পেছনের অংশ পরীক্ষা করে দেখুন। চুল আঁচড়ানোর সময় মাথার তালুর ত্বকে কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব করছেন কিনা দেখুন। কনুই ভাঁজ করে হাতের করতল, পা ও পায়ের পাতা এবং আঙ্গুলের ফাঁকা ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখুন অস্বাভাবিক লাগছে কিনা। সাধারণত দেহের খোলা অংশে ক্যান্সার বেশি হয়। তাই ত্বকে কোন ধরণের অস্বাভাবিকতা দেখতে পেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
রোগের সঠিক নির্ণয়ের লক্ষ্যে ডাক্তার বায়োপসি করার নির্দেশ দিবেন। বায়োপসির মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব ক্যান্সার হয়েছে কিনা। সাধারণত অস্ত্রোপচার ও ঔষধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।
প্রতিরোধ
সকাল দশটা থেকে চারটা পর্যন্ত বাইরে থাকলে হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর সানস্কিন লাগাতে হবে। কড়া রোদে যাওয়ার সময় হাত ঢাকা পোশাক পরুন। ট্যানিং বেড এড়িয়ে চলুন।
মাসে একবার একজন ভালো ত্বক বিশেষজ্ঞ দেখানো জরুরী। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি ডায়েট অথবা ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারির মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। শরীরের কোন অংশে নতুন তিল দেখলে কিংবা পুরনো তিলের রঙ, আকার বা অন্য কোন ধরণের পরিবর্তন, ত্বকের কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ করলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। সচেতনতা বজায় রাখুন, সুস্থ্য থাকুন।
Discussion about this post