পাকস্থলীর ক্যান্সার রোগটি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার নামেও পরিচিত, এটি সাধারণত পাকস্থলীর আবরণী কলা থেকে উৎপত্তি লাভ করে।প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো বুকজ্বালা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা, বমি ও ক্ষুধামন্দা পরবর্তী লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ওজন কমে যাওয়া, জন্ডিস, বমি ডিসফ্যাজিয়া বা খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া, পায়খানার সাথে কালো রক্ত যাওয়া(melena) ইত্যাদি। ক্যান্সার পাকস্থলী থেকে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়াতে পারে বিশেষ করে যকৃৎ, ফুসফুস, অস্থি, পেরিটোনিয়াম বা উদর আবরণী ও লিম্ফনোড উল্লেখযোগ্য।
ক্যানসারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যথাযুক্ত ক্যানসার হিসেবে স্টমাক ক্যানসার বা পাকস্থলী ক্যানসার পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু এ রোগে ভুক্তভোগীদের অনেকের মধ্যে ব্যথা এ রোগের প্রাথমিক সতর্কীকরণ উপসর্গ নয়। নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হেলথ সিস্টেমের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং সার্জিকেল অনকোলজিস্ট ইউমার্ট সার্পেল বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, পাকস্থলী ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ের সবচেয়ে অধিক কমন বৈশিষ্ট্য হতে পারে- এ পর্যায়ে তেমন উল্লেখযোগ্য উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মাঝেমধ্যে পাকস্থলী ব্যথা অনুভব করে থাকি এবং তা লোকজনকে পাকস্থলী ক্যানসারের কথা মনে করিয়ে দুশ্চিন্তায় ফেলে।’ তিনি যোগ করেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাকস্থলী ব্যথা পাকস্থলী ক্যানসারের রেজাল্ট নয়।’
পাকস্থলী ক্যানসার হওয়ার মাত্রা কেমন?
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, মোটামুটিভাবে, ১১১ জন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একজন তার জীবনকালে কোনো না কোনো সময় পাকস্থলী (গ্যাস্ট্রিক) ক্যানসারে ভুগবে এবং এ রোগটি পুরুষদের মধ্যে অধিকতর কমন। ডা. সার্পেলের মতে, ‘আপনার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মধ্যে এ রোগ হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।’
♦ লক্ষণ ও উপসর্গ:
পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রায়শই বিনা উপসর্গে হয়ে থাকে অথবা এটি প্রাথমিক পর্যায়ে কেবল অস্পষ্ট উপসর্গ (লক্ষণ যা অন্যান্য সম্পর্কিত বা অসম্পর্কিত রোগে উপস্থিত হতে পারে) হতে পারে। লক্ষণ প্রকাশ হতে হতে ক্যান্সারটি প্রায়শই একটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং মেটাস্ট্যাসাইজড (শরীরের অন্যান্য অংশে, সম্ভবত দূরবর্তী অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে), যা এটির অপেক্ষাকৃত দুর্বল আরোগ্য সম্ভাবনার মূল কারণগুলির মধ্যে একটি। প্রারম্ভিক ক্যান্সার বদহজম বা জ্বলন্ত সংবেদন (বুকজ্বালা) যুক্ত হতে পারে।
তবে, বদহজমের কারণে, এন্ডোস্কোপির জন্য নির্দেশিত প্রতি ৫০ জন ব্যক্তির মধ্যে ১ এরও কম লোকের ক্যান্সার রয়েছে। পেটে অস্বস্তি এবং খাবারে অনিচ্ছা, বিশেষত মাংসের জন্য, ঘটতে পারে। পাকস্থলীর ক্যান্সারগুলি যেগুলি বেড়ে যায় এবং স্বাভাবিক টিস্যুকে আক্রমণ করে, দুর্বলতা, ক্লান্তি, খাবারের পরে পেট ফোলা, পেটের উপরিভাগে ব্যথা, বমি ভাব এবং মাঝে মাঝে বমি, পেট খারাপ বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আরো বাড়লে ওজন হ্রাস বা রক্তসহ বমি বা রক্তযুক্ত মল হতে পারে, পরবর্তীতে আংশিকভাবে পচনযুক্ত রক্ত ধারণকারী বিবরণ কালো চটচটে মল। কখনও কখনও রক্তাল্পতা হতে পারে। ডিসফ্যাগিয়া কার্ডিয়াতে টিউমারের উপস্থিতি বা গ্যাস্ট্রিক টিউমারের বৃদ্ধির সঙ্কেত দেয়।
পাকস্থলীর ক্যান্সারে লক্ষণ :
(i).মল বা বমির সঙ্গে রক্ত বের হওয়া: ডা. সার্পেল বলেন, ‘পাকস্থলী ক্যানসারের নিশ্চিত উপসর্গ ছাড়াও কোলাইটিস এবং ক্রোনস ডিজিজ উভয় ক্ষেত্রেই রক্তমল হতে পারে, মল বা বমি যে কোনো একটার সঙ্গে রক্ত যাওয়া ডিমান্ড করে যে আপনি একজন জিআই ডাক্তারের কাছে যান।’ যদি রক্তপাত পাকস্থলী ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে আপনার মলের রক্ত মেরুন বা আলকাতরার মতো কালো হতে পারে। অন্যদিকে, বমির রক্ত উজ্জ্বল লাল হতে পারে এবং বমির গঠন হতে পারে অসূক্ষ্ম কফি গ্রাউন্ডের মতো, কারণ এটি আংশিকভাবে হজম হয়েছে।
(ii). দ্রুত ক্ষুধা চলে যাওয়া: আপনি ক্ষুধার্ত ছিলেন, যখন আপনি খেতে বসলেন- কয়েক গ্রাস বা কামড়ের পর আপনার ক্ষুধা চলে গেছে এবং খাবারটি খেতে আর ভালো লাগছে না। এটি হতে পারে পাকস্থলী ক্যানসারের অন্যতম উপসর্গ। ডা. সার্পেল বলেন, ‘বিশেষ করে যদি আপনার ক্ষুধা সচরাচরের তুলনায় দ্রুত মিটে যায়, তাহলে আপনার একে অবহেলা করা উচিত নয়।’
(iii). অন্ত্রে ব্যথা হওয়া: কিছুক্ষেত্রে পাকস্থলী ব্যথা পাকস্থলী ক্যানসারের উপসর্গ। ডা. সার্পেল বলেন, ‘কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার ব্যথা অন্যান্য অন্ত্র বা পেটের অসুস্থতার কারণে হতে পারে, ক্যানসারের জন্য নয়।’ তিনি বলেন, পাকস্থলী ক্যানসার সম্পর্কিত ব্যথার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ব্যথা অনবরত হবে এবং ব্যথা হবে ‘কামড় খাওয়া’ প্রকৃতির। তিনি আরো বলেন, ‘এটি এমন কিছু নয় যে আপনি শুধু একদিনের জন্য অনুভব করবেন, এটি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে এবং আবারো ফিরে আসতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আপনার পাকস্থলীর মধ্যখানে নিস্তেজ ব্যথা হচ্ছে ক্লাসিক পাকস্থলী ক্যানসার ব্যথা।’
(iv). অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হ্রাস পাওয়া: ডা. সার্পেল বলেন, ‘অনেক শারীরিক অবস্থা, যেমন- টাইপ-১ ডায়াবেটিস, অ্যাডিসন’স ডিজিজ এবং ক্রোন’স ডিজিজ, অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমাতে পারে। এ তালিকায় পাকস্থলী ক্যানসার অন্তর্ভুক্ত করুন।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘যদি আপনি ওজন হারাতে থাকেন এবং ডায়েটিং না করেন, তাহলে তা এমন কিছু যাতে আপনার মনোযোগ দেয়া উচিত।’ এরকম ওজন হ্রাসের ব্যাপারে সচেতন থাকুন, কারণ এই ওজন হ্রাস ধীরে ধীরে হতে পারে। হঠাত্ ওজন হ্রাসের বিষয়টি আপনার লক্ষ্যে নাও আসতে পারে। এ জন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনি স্কেলের সাহায্য নিতে পারেন। ৬ মাসের মধ্যে কয়েক পাউন্ড ওজন হ্রাসের জন্য দুশ্চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আপনার প্রচেষ্টা ব্যতীত উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন হ্রাস পেয়ে থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
(v). বুকজ্বালা হওয়া: ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টারের রিসোর্স অনুসারে, বুকজ্বালা, বদহজম এবং অসুস্থ অন্ত্রের অন্যান্য কমন উপসর্গও হতে পারে পাকস্থলী ক্যানসারের প্রাথমিক সতর্কীকরণ উপসর্গ। ডা. সার্পেল বলেন, ‘এ রকম উপসর্গসমূহ ক্যানসারের তুলনায় অন্যান্য শারীরিক দুরবস্থার নির্দেশক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ কিন্তু উপসর্গ যেটারই হোক না কেন, আপনার উচিত হবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
(vi). পেটফোলা, ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া: আপনার পাকস্থলীতে ক্যানসার বিকশিত হলে আপনার পেটফোলা, ডায়রিয়া/ কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এসব উপসর্গের প্রত্যেকটা এককভাবে ক্যানসারের লক্ষণ না হলেও এদের সঙ্গে এ প্রতিবেদনের অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে আপনাকে ক্যানসার সম্পর্কিত ফলো-আপ টেস্টিং করতে হতে পারে, যদি আপনার ডাক্তার এসবের জন্য অন্য কোনো সমস্যাকে চিহ্নিত না করে।
Discussion about this post