ডা. জয়নাল আবেদীন, এমবিবিএস, এফসিপিএস (চক্ষু)
চোখ ওঠা রোগকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কনজাংটিভাইটিস বা পিংক আই (Conjunctivitis) বলে। রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। কখনো কখনো রোগটি ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি কিংবা কেমিক্যালের কারণেও হতে পারে। এটা এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ধরা বস্তু ও পানির মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পাড়ে।
আর এখন যে চোখ ওঠা রোগ দেখা দিয়েছে সে ক্ষেত্রেও চোখ ভয়ানকভাবে লাল হয়ে যায়। দেখতে ভয়ানক হলেও রোগটি ততটা ভয়ঙ্কর নয়। তবে চোখ বলে কথা। এজন্য আক্রান্ত হলেই সবাই অনেকটা অস্বস্তিতে ভোগেন- কখন কী হয়ে যায়! রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। রোগটি ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি কিংবা কেমিক্যালের কারণেও হতে পারে।
চোখ ওঠার লক্ষণগুলো হচ্ছে :
- চোখ জ্বালাপোড়া করা
- চোখের ভিতর অস্বস্তি হতে থাকে
- সামান্য ব্যথা হয়
- রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হয়
- অতিমাত্রায় পানি পড়ে।
- এছাড়া চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠে।
- ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা দুটি একত্রে লেগে থাকে।
- চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হতে থাকে ও হলুদ রঙের পুঁজ সৃষ্টি হয়।
সাধারণত ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো কমে আসে। কিন্তু দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। চোখের মণি বা কর্নিয়ায় সাদা দাগ পড়ে যায়। খালি চোখে দেখে বোঝা যায় না। এতগুলো উপসর্গ আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে একসঙ্গে দেখা নাও যেতে পারে।
চিকিৎসা
অ্যালার্জিজনিত কারণে চোখ উঠলে প্রধান চিকিৎসা হলো চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ অথবা অ্যান্টি হিস্টামিন দেওয়া যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে চোখ উঠলে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। আর যদি রোগটি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় অ্যান্টিবায়োটিক চোখের ড্রপ অথবা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভাইরাসজনিত কারণে চোখ ওঠার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এ ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা পানি এবং কৃত্রিম চোখের পানি দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কেমিক্যালের কারণে চোখ ওঠার ক্ষেত্রে রিঙ্গার ল্যাকটেট অথবা স্যালাইন পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কোনো কারণে চোখ উঠেছে নিশ্চিত হতে হলে করতে হবে সোয়াব কালচার পরীক্ষা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই চোখ ওঠা ভালো হয়ে যায় এবং রোগটি স্থায়ী হতে পারে দুই থেকে পাঁচ দিন। তাই এই রোগ নিয়ে সত্যিই শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
কেমিক্যালের কারণে চোখ ওঠার ক্ষেত্রে রিঙ্গার ল্যাকটেট অথবা স্যালাইন পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কোন কারণে চোখ উঠেছে নিশ্চিত হতে হলে করতে হবে সোয়াব কালচার পরীক্ষা।
কীভাবে চোখ উঠার জীবাণু ছড়ায়
১. চোখ ওঠা খুবই ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এটি হয়। অপরিষ্কার হাত, আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শে, আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে, গামছা ব্যবহারে চোখ উঠতে পারে।
২. অ্যালার্জি ধুলাবালির মাধ্যমে;
৩. চোখের কসমেটিকস ব্যবহারে চোখ উঠতে পারে।
চোখ ওঠা রোগে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরী
যেমন : ১. চোখে হাত দেবেন না;
২. ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ভালোমতো পরিষ্কার করুন।
৩. যেসব জিনিসে অ্যালার্জিক তা থেকে দূরে থাকুন
৪.ধুলাবালি, আগুন-আলো-রোদে কম যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
৫. ময়লা-আবর্জনাযুক্ত সেঁতসেঁতে জায়গা এড়িয়ে চলুন।
৬. পুকুর বা নদী-নালায় গোসল না করাই ভালো।
৭. চোখে কালো চশমা ব্যবহার করুন।
৮. সারাক্ষণ মোবাইল ফোনের মনিটরে, টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকবেন না। এতে চোখে চাপ পড়ে যা সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়।
৯. সম্ভব হলে ৭ থেকে ১০ দিন সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন।
১০. ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
চোখ ওঠা খুবই ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজনের থেকে অন্যজনের হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবাই কাপড়, তোয়ালে ও অন্যান্য জিনিস আলাদা ব্যবহার করুন।
. লেখক: সহকারী অধ্যাপক, চক্ষুরোগ বিভাগ, রাংগামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ
চেম্বার: পার্কভিউ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ফোন : ০১৮২৭-৫১৬৬১৯
Discussion about this post