চোখের কমন ইনফেকশন ও লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো।
চোখের কমন ইনফেকশন : কনজাঙ্কটিভাইটিস (পিংক আই) : কনজাঙ্কটিভা বা চোখের পাতার ভেতরের স্তরে অবস্থিত স্বচ্ছ ঝিল্লিতে প্রদাহ বা ইনফেকশন হওয়াকে কনজাঙ্কটিভাইটিস বা পিংক আই বা চোখ ওঠা রোগ বলে। এই ইনফেকশনের অধিকাংশ কেসই ভাইরাস জনিত এবং নিজে নিজে সেরে ওঠে। কিন্তু ইনফেকশনটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হলে অ্যান্টিবায়োটিক আই ড্রপস ব্যবহারের প্রয়োজন হবে।
ব্লেফ্যারাইটিস : এটি হলো চোখের পাতার প্রদাহ, যা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দ্বারা সৃষ্টি হতে পারে। এ সমস্যাটি দৃষ্টিশক্তির সমস্যা সৃষ্টি করে না, কিন্তু এটি খুব অস্বস্তিকর হতে পারে।
আইরিটিস : এটি হলো চোখের আইরিস বা রঙিন অংশের প্রদাহ। শিনগ্লেস ভাইরাস দ্বারা আইরিটিস হতে পারে।
কেরাটাইটিস : কেরাটাইটিস হলো কর্নিয়ার ইনফেকশন। চোখের তারা বা পিউপিল ও চোখের রঙিন অংশ বা আইরিসকে আচ্ছাদনকারী স্বচ্ছ অংশই হলো কর্নিয়া। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী ও ছত্রাক দ্বারা ইনফেকশাস কেরাটাইটিস হতে পারে। এটি হলো চিকিৎসাযোগ্য রোগ, কিন্তু চিকিৎসা না করলে দৃষ্টির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
এন্ডোফথ্যালমাইটিস : এন্ডোফথ্যালমাইটিস হলো চোখের সাদা অংশের ভেতরে সৃষ্ট ইনফেকশন। আমেরিকান সোসাইটি অব রেটিনা স্পেশালিস্টস অনুযায়ী, ইনফেকশাস এন্ডোফথ্যালমাইটিস হলো একটি ইমার্জেন্সি এবং অবিলম্বে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
কীভাবে চোখে ইনফেকশন হয় : চোখে ইনফেকশনের অন্যতম কমন কারণ হলো দূষিত কন্টাক্ট লেন্স পরা। আপনার কন্টাক্ট লেন্স বা কেসে ব্যাকটেরিয়া থাকলে এসব ক্ষতিকর জীবাণু কন্টাক্ট লেন্স পরামাত্র চোখে ছড়াতে পারে। সবসময় কন্টাক্ট লেন্স পরে থাকলেও চোখে ইনফেকশন হতে পারে, কারণ কন্টাক্ট লেন্সের অতি ব্যবহারে প্রদাহ ও প্রদাহ থেকে ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি হতে পারে।
আপনার কন্টাক্ট লেন্স দূষিত পানির সংস্পর্শে আসলেও চোখে ইনফেকশন হতে পারে। দূষিত সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলে অথবা দূষিত পানিতে গোসল করলে কিংবা দূষিত পানি দিয়ে কন্টাক্ট লেন্স ধুয়ে থাকলে আপনার চোখে ইনফেকশন ডেভেলপ হতে পারে। এছাড়া যারা কন্টাক্ট লেন্স পরেন না তাদের চোখে ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু প্রবেশ করলে ইনফেকশন বিকশিত হতে পারে। চোখ ওঠেছে এমন লোকের সংস্পর্শ আসলে আপনারও এ রোগ হতে পারে, কারণ চোখ ওঠা রোগটি ছোঁয়াচে।
চোখের ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কী : চোখের ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো- চোখ থেকে পানি পড়া অথবা চোখ শুকিয়ে যাওয়া, চোখ থেকে শ্লেষ্মা বা আই বুগার বের হওয়া, চোখ লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া, চোখে চুলকানি হওয়া, চোখে জ্বালাপোড়া করা, চোখে ব্যথা অনুভব করা, আলোক সংবেদনশীলতা বা আলো সহ্য করতে না পারা, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া বা কমে যাওয়া (ইমার্জেন্সি), কর্নিয়ার ওপর মেঘাচ্ছন্নতা বা ঘোলাটে হওয়া (ইমার্জেন্সি) ইত্যাদি।
কাদের চোখের ইনফেকশন বেশি হয় : দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা যেকোনো ইনফেকশনের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন, যেমন- চোখের ইনফেকশন। আপনি তামাক ব্যবহারে অভ্যস্ত হলে আপনার চোখে ইনফেকশন হওয়ার বর্ধিত ঝুঁকি রয়েছে, বলছে গবেষণা। যদি আপনি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ইনফেকশন বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। চোখ লাল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার। ঝুঁকি কমাতে কখনো কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমাবেন না এবং নিয়মিত কন্টাক্ট লেন্স ও কেস ধুয়ে নিন। যেসব লোকের চোখে ইনজুরি হয়েছে তারাও ইনফেকশনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
কীভাবে চোখের ইনফেকশনের চিকিৎসা করবেন : চিকিৎসা নির্ভর করছে আপনার কোন ধরনের ইনফেকশন হয়েছে তার ওপর। আপনার চোখ ওঠলে বা পিংক আই হলে চিকিৎসা নেয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হবেন না, কারণ অধিকাংশ পিংক আই ভাইরাস বা অ্যালার্জি জনিত। ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন হবে। আপনার চিকিৎসক টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করলে তা ড্রপ বা অয়েন্টমেন্ট ফর্মে সরাসরি চোখে প্রয়োগ করতে হবে। কখনো কখনো ওরাল অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। প্রদাহ প্রশমিত করতে আপনার চিকিৎসক স্টেরয়েড আই ড্রপসও প্রেসক্রাইব করতে পারেন। আপনার যে ধরনের ইনফেকশনই হোক না কেন, আপনার চিকিৎসক নিরাময়ের সময়টুকুতে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার না করতে পরামর্শ দিতে পারেন। হার্ড লেন্সকে জীবাণুমুক্ত করুন এবং এটিকে সফট লেন্স দ্বারা প্রতিস্থাপন করা উচিত।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্
Discussion about this post