ডা :নাফিসা আবেদীন
প্রোস্টেট ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী রোগ। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নতুন করে প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে ৩০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু ঘটে। তবে রোগের শুরুতে ধরা পড়লে রোগীর প্রাণে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকেই বুঝতে পারে না যে এই মারণরোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে।
প্রোস্টেট ক্যানসার কাদের এবং কেন হয়
এখন পর্যন্ত প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণ জানা যায়নি। তবে কয়েকটি বিষয় আছে, যা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন, বয়স বৃদ্ধি অর্থাৎ ৫০ বছরের ওপর পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। গবেষকদের মতে, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা প্রোস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধূমপায়ীদের প্রোস্টেট ক্যানসার অধূমপায়ীদের তুলনায় বেশি। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণসমূহ
প্রোস্টেট ক্যানসার অনেক ধীরে বৃদ্ধি পায়, তাই কয়েক বছর পর্যন্ত সব লক্ষণ অনুভব না–ও হতে পারে। তবে প্রোস্টেট বড় হয়ে যখন মূত্রনালিকে আক্রান্ত করে তখন বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। রোগী তখন প্রস্রাব করতে অনেক ধরনের অসুবিধাবোধ করে। যেমন, হঠাৎ বেশি বেগে প্রস্রাব পাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতের বেলা বেশি প্রস্রাব হওয়া। মূত্রত্যাগের শুরুতে প্রস্রাব আসতে দেরি হওয়া এবং প্রস্রাব শেষ করতে অনেক বেশি সময় লাগা। মূত্রত্যাগের পরেও প্রস্রাবের বেগ আছে মনে হওয়া। প্রস্রাবের বেগ আটকে রাখা কষ্টকর হওয়া। প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব হওয়া, সঙ্গে রক্ত যাওয়া। অগ্রবর্তী পর্যায়ে কোমর ও তলপেটে ব্যথা অনুভব হওয়া।
প্রোস্টেট ক্যানসার নির্ণয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা
রক্তে PSA পরীক্ষা প্রোস্টেট ক্যানসার নির্ণয়ে সাহায্য করে। এর মাত্রা ৪–এর নিচে থাকলে চিন্তার কিছু নেই। সাধারণত ক্যানসার হলে এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। TRUS নামক একটি পরীক্ষা দ্বারা একধরনের ultra sonography-এর মাধ্যমে প্রোস্টেটের ভালো ছবি দেখা যায়। ওই ছবিতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে BIOPSY করা হয়। BIOPSY-এর মাধ্যমে ক্যানসার আছে কি না এবং থাকলে ক্যানসারটি কী ধরনের, তা–ও জানা যায়।
চিকিৎসা
প্রোস্টেট ক্যানসার শুরুতে ধরা পড়লে নির্মূল করা যায়। দেরি হলে রোগ সম্পূর্ণ সারানো না গেলেও রোগ বেড়ে যাওয়া আটকানো যায়। র্যাডিক্যাল প্রোস্টেকটমি অপারেশন হলো এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা। এ ছাড়া রোগের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, কেমোথেরাপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
প্রশ্ন হলো প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কি বাঁচে? নিশ্চয় বাঁচে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। একেবারে শেষ পর্যায়ে এলেও রোগ বাড়তে না দিয়ে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায়।
পুরুষদের যত ক্যানসার হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় কোলোরেক্টাল ও ফুসফুসের ক্যানসার। এরপরই হয় প্রোস্টেট ক্যানসার। কিন্তু একটু সতর্কতাই পারে এই ক্যানসারের কারণে পুরুষদের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে।
লেখক: আবাসিক চিকিৎসক, প্যাথলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
Discussion about this post