ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হয়। কিন্তু ওই মুহূর্তে সামনে যাঁরা আছেন, তাঁরা যদি একটু সক্রিয় হন, তাহলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। উন্নত বিশ্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রায় সবাই জরুরি অবস্থায় জীবন বাঁচানোর এই পদ্ধতির প্রশিক্ষণ নেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলে কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন বা সংক্ষেপে সিপিআর। এটি একটি প্রাথমিক চিকিৎসা।
সিপিআর কখন দরকার
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে সিপিআর দরকার হয়। হঠাৎ পড়ে গিয়ে কিংবা আকস্মিক কোনো ঘটনায় রোগীর সাড়াশব্দ না পাওয়া, নাড়ির স্পন্দন না পাওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া হলো হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। এই অবস্থায় সিপিআর পদ্ধতিতে অনেক সময় জীবন বাঁচানো সম্ভব।
সিপিআর যেভাবে দিতে হবে
প্রথম ধাপ: আক্রান্ত ব্যক্তি পানি বা আগুনের কাছে থাকলে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে আনুন। রাস্তার মাঝখানে থাকলে রাস্তার পাশে নিন।
দ্বিতীয় ধাপ: আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন। যেমন কাঁধে জোরে ঝাঁকুনি দিন, জোরে জোরে ডাকুন, কোনো সাড়া পাওয়া যায় কি না দেখুন।
তৃতীয় ধাপ: নাড়ির গতি (পালস) এবং শ্বাসপ্রশ্বাস পরীক্ষা করুন। গলার একটু ডান বা বাঁ পাশের ক্যারোটিড ধমনিতে হালকা চাপ দিয়ে নাড়ির গতি পরীক্ষা করুন। শ্বাসপ্রশ্বাস পরীক্ষা করুন বুকের ওঠানামা পর্যবেক্ষণ করে। এই চেকআপ ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই সারা দরকার। এর আগে সাহায্য পেতে তৎপর হোন, মুঠোফোনে কাউকে ডাকুন বা ৯৯৯-এ কল করুন।
চতুর্থ ধাপ: এই ধাপেই মূল সিপিআর শুরু করতে হবে। তিনটি ছন্দোবদ্ধ কাজই হলো সিপিআর। কাজ তিনটি হলো, জোরে জোরে বুকের মাঝখানে চাপ দেওয়া, শ্বাসনালি খোলা রাখা এবং মুখে মুখ লাগিয়ে অথবা মাস্কের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর আক্রান্ত ব্যক্তিকে শ্বাস দেওয়া।
প্রথমেই বুকের মাঝখানে জোরে জোরে চাপ দিতে হবে। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আক্রান্ত ব্যক্তিকে শক্ত কিছুর ওপর চিত করে শোয়ান। বুকের ওপরের কাপড় সরিয়ে ফেলুন। এবার হাঁটু গেড়ে বসে এক হাতের ওপর আরেক হাতের তালু রেখে দুই হাত দিয়ে বুকের মাঝখানে প্রতি মিনিটে ১০০ বারের মতো এমনভাবে চাপ দিন, যেন বুকের মাঝখানটা ৫-৬ সেন্টিমিটার নিচের দিকে দেবে যায়। প্রতি ৩০ বার বুকে চাপ দেওয়ার পর দুবার আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে নিজের মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে হবে। শ্বাস দিতে আক্রান্ত ব্যক্তির নাক দুই আঙুল দিয়ে চেপে ধরে, মাথা নিচের দিকে রেখে থুতনিকে ওপরের দিকে তুলে নিন। নিজে স্বাভাবিক শ্বাস নিন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে মুখ লাগিয়ে ১ সেকেন্ডে দুবার শ্বাস দিন।
এ রকম ছন্দোবদ্ধ বুকে চাপ এবং শ্বাস দেওয়ার কাজ টানা ২ মিনিট করার পর নাড়ির গতি এবং শ্বাসপ্রশ্বাস পরীক্ষা করে দেখুন। শ্বাসপ্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দনের গতি বা নাড়ির গতি ফিরে না আসা পর্যন্ত কাজটি করে যেতে হবে এবং দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে সিপিআর দেওয়া অবস্থাতেই হাসপাতালে নিতে হবে। নাড়ির গতি এবং শ্বাসপ্রশ্বাস ফিরে এলে সিপিআর বন্ধ করতে হবে।
Discussion about this post