ডা. মো. শরিফুল ইসলাম
নিউমোনিয়া হলো ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ। সংক্রমণ–পরবর্তী প্রদাহ থেকে এ রোগ হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে। সব সর্দি-কাশিই নিউমোনিয়া নয়। যখন জ্বরের সঙ্গে কফ এবং শ্বাসকষ্ট থাকবে, তখনই কেবল শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয়েছে বলে ধরা হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে। এই সময়ে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস, এমনকি নিউমোনিয়াও হতে পারে। শীতে শিশু এবং বয়স্কদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই নিউমোনিয়া। তবে এ অসুখ বছরব্যাপী হতে পারে।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু ও বৃদ্ধ নিউমোনিয়ার কারণে মারা যায়। আর শীতের সময় তা বৃদ্ধি পায়। তবে সাবধানতা অবলম্বন করলে এই নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব। এখন সরকারিভাবে শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধ টিকা দেওয়া হয়।
শিশুর শ্বাসকষ্ট বুঝবেন কীভাবে
দুই মাসের নিচের শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসের হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, এক বছরের নিচে ৫০ বার বা তার বেশি এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছরের শিশুর মিনিটে ৪০ বার তা তার বেশি শ্বাসপ্রশ্বাস হলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়।
তাই জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত শিশু এ রকম ঘন ঘন শ্বাস নিলে বা শ্বাসের সঙ্গে বুক বা পাঁজর নিচে দেবে যেতে থাকলে সতর্ক হোন, হয়তো সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি যাদের
● ছোট্ট শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা।
● বহুদিন ধরে ভুগছে এমন কোনো রোগ থাকলে, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, ফুসফুসের অন্য কোনো রোগ, এইডস ইত্যাদি থাকলে।
● যাদের অন্য কোনো কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, যেমন ক্যানসারের চিকিৎসা নিলে, স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ সেবন করলে।
● যাঁরা ধূমপান করেন।
চিকিৎসা
সাধারণত নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। এ জন্য সঠিক ওষুধের পাশাপাশি এ সময় প্রচুর তরল খাবার, পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে। নিউমোনিয়া ভালো হতে দু–তিন সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। কুসুম গরম পানি, লবণপানি বা লাল চা দেওয়া যেতে পারে। নাকে নরমাল স্যালাইন, নরসল ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অন্য কোনো ওষুধজাতীয় ড্রপ দেওয়া যাবে না। দুই বছরের নিচের শিশুদের বুকের দুধ বন্ধ করা যাবে না। বুকে তেল, ভিক্স বাম ব্যবহার করাও উচিত নয়। শিশুদের সামান্য কাশিতে অহেতুক সাকশন যন্ত্র দিয়ে কফ পরিষ্কার বা নেবুলাইজার যন্ত্র ব্যবহারও ঠিক নয়।
তবে অবস্থা সংকটাপন্ন হলে, অর্থাৎ খুব বেশি শ্বাসকষ্ট, সবকিছুই বমি করে দিলে, শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে বা খিঁচুনি হলে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
কী জটিলতা দেখা দেয়
● রক্তপ্রবাহে জীবাণুর সংক্রমণ
● ফুসফুসের চারপাশে তরল জমা এবং সংক্রমণ
● ফুসফুসে ঘা হয়ে ক্ষত হতে পারে
● তীব্র শ্বাসকষ্ট
শীতে খেলাধুলা করলে
যাঁরা বিভিন্ন খেলাধুলা, বিশেষ করে রাতে, যেমন ব্যাডমিন্টন খেলেন, তাঁদের একটু সচেতন হওয়া উচিত। কারণ, গা ঘেমে তা যদি আবার শরীরে শুকিয়ে যায়, তাহলে তা থেকে ঠান্ডা, সর্দি-কাশি হতে পারে। সেখান থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। তবে সুখবর হলো, যাঁরা নিয়মিত খেলাধুলা বা ব্যায়াম করেন, তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার কারণে সাধারণত এসব অসুখে কম ভোগেন। আর এই তীব্র শীতে বাড়ি থেকে বের হলে মুখে মাস্ক পরা যেতে পারে। তাহলে শ্বাসনালিতে ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলো কম হবে।
প্রতিরোধ করা যায়
হ্যাঁ, নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সচেতন হলে সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।
১. নিতে হবে নিউমনিয়ার ভ্যাকসিনসহ অন্য রোগেরও, যারা নিউমোনিয়া করতে পারে। বিশেষ করে ৫ বছরের নিচে বা ৬৫ বছরের ওপরে বয়সীদের অথবা যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
২. নিয়মিত হাত ধুতে হবে। যেমন নাক পরিষ্কারের পর, বাথরুমে যাওয়ার পর, খাবার আগে ও পরে।
৩. ধূমপান বন্ধ করতে হবে। কারণ, ধূমপান ফুসফুসের রোগপ্রতিরোধ করার ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। ফলে সহজেই সংক্রমণ ঘটতে পারে এবং নিউমোনিয়া হতে পারে। ধূমপায়ীদের নিউমোনিয়া সহজেই জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
৪. এ ছাড়া সাধারণ ঠান্ডা লাগলেও খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি খারাপ দিকে না যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিশু জন্মের পর ইপিআই শিডিউলের ভ্যাকসিনগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিশুকে চুলার ধোঁয়া, মশার কয়েল ও সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখাও জরুরি।
Discussion about this post