লাজিনা ইসলাম চৌধুরী
লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড শরীরের জন্য একটি জরুরি যৌগ। সোডিয়াম স্নায়ু ও পেশির কাজের জন্য অপরিহার্য এবং শরীরের তরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। আবার প্রয়োজনের বেশি লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে রক্তচাপ বাড়ে। হৃদ্যন্ত্র, ধমনি, কিডনি ও মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত লবণ হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ এবং কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
গবেষকেরা বলেন, দৈনিক ৫ গ্রামের কম লবণ গ্রহণ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, স্ট্রোক, করোনারি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। রান্না ও খাবারের সঙ্গে মেশানো কাঁচা—সবটা মিলিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ৬ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। এই পরিমাণ লবণ প্রায় এক চা–চামচের সমান।
থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য শরীরে খনিজ আয়োডিন প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের খাবারে আয়োডিন পাওয়া যায়। বেশির ভাগ লবণেও এখন আয়োডিন যুক্ত করা হয়। এগুলোকে আয়োডিনযুক্ত লবণ বলে। এই লবণে আয়োডিনের মান অক্ষুণ্ন রাখতে শুকনো কাচের বয়ামে লবণ সংরক্ষণ করতে হবে।
বাংলাদেশে প্রায় সবারই খাবারে লবণের পরিমাণ একটু বেশিই থাকে। যেমন ভর্তা, শুঁটকি, আচার, সালাদ ইত্যাদিতে প্রচুর লবণ দেওয়া হয়; কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসকেরা কম লবণ খেতে নির্দেশ করেন। এ ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে খুব সহজেই খাবারে লবণের পরিমাণ কমানো যায়। যেমন—
• প্রক্রিয়াজাত যেসব খাবারে লবণ বেশি থাকে, সেগুলো এড়াতে হবে।
• খাবার সুস্বাদু করতে লবণের পরিবর্তে ভিনেগার, অরিগেনো, রোজমেরি ও রসুনের গুঁড়া ব্যবহার করুন।
• রেস্তোরাঁর খাবারগুলো টাটকা রাখতে উচ্চ পরিমাণে সোডিয়াম ব্যবহার করা হয়। কাজেই এ ধরনের খাবার যতটা সম্ভব এড়াতে হবে। বিশেষ করে যেসব খাবারে টেস্টিং সল্ট, সয়া সস, ওয়েস্টার সস, কেচাপ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো এড়াতে হবে।
• চামচ মেপে লবণ খাওয়া সম্ভব নয়। তাই লবণ গ্রহণ দৈনিক ৬ গ্রামে সীমিত রাখতে কাঁচা লবণ খাওয়া একেবারেই বাদ দিন। এমনকি সালাদ ও ফলে লবণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। লবণ ভেজেও খাওয়া চলবে না।
পুষ্টিবিদ- পিপলস হাসপাতাল, খিলগাঁও, ঢাকা
Discussion about this post