বিশেষ প্রতিবেদক
শিশুদের মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম (এমআইএস-সি) করোনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি নতুন রোগ। যা বাংলাদেশে গত ১৫ মে প্রথম শনাক্ত হয়েছে। তবে এ রোগের চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে এভারকেয়ার হাসপাতালের এক দল চিকিৎসক।
এভারকেয়ার হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক (কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং এন্ড মার্কেটিং কমিউনিকেশন) মোঃ সালাউদ্দিন মামুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৬ এপ্রিল এ রোগ প্রথম ধরা পড়েই যুক্তরাজ্যে। পরে পর্যায়ক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতেও দেখা যায়। আর বাংলাদেশ এটি প্রথম শনাক্ত হয় ১৫ মে। এবং ২৭ মে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে এ রোগ শনাক্ত হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালে শিশু ইন্সেন্টিভ সহযোগিতায় হাসপাতালের শিশুরোগ বিষয়ক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এম কামরুল হাসান, শিশুরোগ কনসালটেন্ট ডা. তাহেরা নজনিন ও শিশু বিভাগের ডাক্তার গনের একান্ত প্রচেষ্টায় এ রোগটি নির্ণয় করে ও সফলভাবে চিকিৎসা করে সফলতা পেয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোগী দুজনের মধ্যে একজন ছেলে ও অন্য জন মেয়ে শিশু। এদের বয়স আড়াই বছরের মধ্যে। দুজন শিশুরই পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উচ্চ তাপমাত্রা ছিল। জ্বরের পাশাপাশি ডায়রিয়া, চোখ ওর ঠোঁট লাল হয়ে যাওয়া এবং পায়ে হালকা ফোলা ভাব। এর সঙ্গে তাদের হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী করোনারী রক্তনালীও আক্রান্ত হয়ে ফুলে গিয়েছিল।বয়সে বড় শিশুটির খিচুনি হয়েছিল এবং সেই সাথে ছিল হার্ট বড় হয়ে যাওয়া ও হার্টের কার্যক্ষমতা হ্রাস।
আরটি-পিসিআর টেস্টে একটি শিশুটির কোভিড-১৯ পজিটিভ ও দেখায়। অন্য রোগীটির রেজাল্ট যদি নেগেটিভ আসে, কিন্তু কিছুদিন পরেই তার পরিবারের সকল সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) পরামর্শ মতে কোভিড-১৯ ও এমআইএস-সি একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত। পজিটিভ এন্টিবডি পরীক্ষা করে এটি প্রমাণিত যে, এমআইএস-সিতে আক্রান্ত শিশু অতীতে কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষণ ও ছিলনা। তবুও শিশুদের মধ্যে এভারেস্টে সক্রিয় হতে পারে এবং একই সাথে তার মধ্যে এমআইএস-সি এর লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে সার্স কোভ-২ ভাইরাসটি তারা পুরো পৃথিবী বৈশ্বিক মহামারিতে আক্রান্ত। সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে এর সংক্রমণ ও মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, শিশুদের আক্রান্ত হাওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। বাংলাদেশের মোট আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল ২০ বছরের নিচে। ১০ বছরের নিচে ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তবু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে ক্লিনিক্যাল প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ সদৃশ নতুন আরেকটি ক্লিনিক্যাল সিনড্রোম রয়েছে যাতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নতুন এই বিরল রোগটির নাম মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম(এমআইএস-সি) অথবা পেডিয়াট্রিক মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম (পিএমআইএস)। এ রোগে শরীরের একাধিক অঙ্গে রক্তনালীর প্রধান সৃষ্টি হয়। এটি রক্তপ্রবাহ কমে গিয়ে হার্ট, কিডনি,ফুসফুস ও যকৃতের মতো একাধিক ওকে ক্ষতিগ্রস্ত করে । এরপর সিস্ট অনেকটা কাওয়াসাকি ডিজিস ও টক্সিক শক সিনড্রোমের মতো।
এমআইএস-সি এর লক্ষণসমূহ:
প্রচণ্ড জ্বর থাকবে, যা তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ী হতে পারে। পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া ও বমি ভাব হবে। চোখ, ঠোঁট ও জিহ্বা লাল হয়ে যাওয়া। চামড়ায় ফুসকুরি ওঠা। ত্বকের রং পরিবর্তন ত্বকের নিচে রক্ত জমার লক্ষণ প্রকাশ পায়। বুকের ব্যথা অনুভব হবে। শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তি লাগবে।এবং শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়া দাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দিবে।
এমআইএস-সি এর চিকিৎসা
ওপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলেই অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই চিকিৎসা বাড়িতে করা সম্ভব নয়। কারণ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন হয়। এমনকি আইসিইউ এর প্রয়োজন হতে পারে।অভিবাবকদের অবশ্য সজাগ থাকতে হবে এবং তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলেছে এমন লক্ষণ খেয়াল রাখতে হবে।
Discussion about this post